সব গুনাহ কি মাফ হয়? Sob gunah ki maf hoi?

 অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কাবীরা সগীরা সকল গুনাহ- কি মাফ হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, আল্লাহ চাইলে সকল গুনাহ- মাফ করতে পারেন তবে তিনি কুরআনে বলে দিয়েছেন যে, তিনি শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না এছাড়া অন্যান্য গুনাহ মাফ করবেন যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন’’[1]

 700,000+ Best Nature Pictures & Images in HD

শির্ক ছাড়া অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তাওবাহ্ করার দরকার হয় কিন্তু সগীরা গুনাহ মাফের জন্য সবসময় তাওবার প্রয়োজন হয় না দৈনন্দিন কিছুআমলের মাধ্যমে এসব ছোট-খাট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায় তাই কাবীরা গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে সগীরা গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি বলেন,

إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا

‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কাবীরা গুনাহগুলো বা গুরুতর/বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো’’[2]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ

‘‘যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া কাবীরা গুনাহ অশ্লীল কাজ হতে বিরত থাকে নিশ্চয় তোমার রব অপরিসীম ক্ষমাশীল’’[3]

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلٰى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ

পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমুআহ্ থেকে আরেক জুমুআহ্ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান; এর মাঝে সংঘটিত (সগীরা) গুনাহ মুছে ফেলে, যদি কাবীরা গুনাহ থেকে সে বেঁচে থাকে তাহলে (নতুবা নয়)’[4]

অর্থাৎ কেউ যদি ফজরের সলাত আদায় করে, তারপর যোহরের সময় যোহরের সলাত আদায় করে তাহলে সে ফজরের সলাতের পর থেকে যোহরের সলাত পর্যন্ত যে সব সগীরা গুনাহ করেছে, যোহরের সলাত আদায় করার সাথে সাথে তার সেই গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে রকমই এক সপ্তাহে জুমুআহর সলাত আদায় করে পরের সপ্তাহের জুমুআর সলাত আদায় করলে এই দুই জুমুআর মধ্যবর্তী সাত দিনের সগীরা গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে

একইভাবে বছর যারা রমাযান মাসের সিয়াম পালন করেছে এবং পরবর্তী বছরও রযামানের সিয়াম পালন করলে তার এই দুই রমাযানের মাঝের এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে তবে শর্ত হচ্ছে এই সময়গুলোতে কাবীরা গুনাহ করা যাবে না

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

الصَّلاَةُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ

‘‘পাঁচ ওয়াক্তের সলাত, এক জুমুআহ্ থেকে আরেক জুমুআহ্ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সব পাপের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি কাবীরা গুনাহসমূহ তাকে আবিষ্ট না করে (অর্থাৎ সে কোন কাবীরা গুনাহ না করে)’’[5]

আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُه صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذٰلِكَ الدَّهْرَ كُلَّه

‘‘যে ব্যক্তি ফরয সলাত উপস্থিত হলে সে জন্য উত্তমরূপে উযূ করবে (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপেরুকূ‘’ করবে তাহলে তার সলাত পূর্বে সংঘটিত কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশির জন্য কাফ্ফারা বা মাফের অবলম্বন হয়ে যাবে আর বিধান সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য’’[6]

সাধারণভাবে ভালো কাজ খারাপ কাজকে মুছে ফেলে যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ

‘‘নিশ্চয় ভালো কাজগুলো মন্দকাজগুলোকে মিটিয়ে দেয়’’[7]

উপরিউক্ত আয়াত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ আল্লাহ তাআলা সাধারণ নেক কাজের মাধ্যমে এমনিতেই ক্ষমা করে দেন এর জন্য বিশেষ তাওবাহ্ জরুরি নয় বিভিন্নআমলের মাধ্যমেই এসব গুনাহ মাফ হয়ে যায় তবে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, কিছু কিছু কাবীরা গুনাহও বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

ذَاكَ جِبْرِيلُ أَتَانِي فَقَالَ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ وَإِنْ زَنٰى وَإِنْ سَرَقَ

‘‘তিনি জিবরীল (.) আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে (অর্থাৎ শির্ক না করে) মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেবর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে চুরি করে তবুও?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে চুরি করে তবুও’’[8]

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

إِنِّى لِأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولًا الْجَنَّةَ وَآخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا رَجُلٌ يُؤْتٰى بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ اعْرِضُوا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوبِه وَارْفَعُوا عَنْهُ كِبَارَهَا. فَتُعْرَضُ عَلَيْهِ صِغَارُ ذُنُوبِه فَيُقَالُ عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا وَعَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا. فَيَقُولُ نَعَمْ. لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يُنْكِرَ وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِ ذُنُوبِه أَنْ تُعْرَضَ عَلَيْهِ. فَيُقَالُ لَه فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ حَسَنَةً. فَيَقُولُ رَبِّ قَدْ عَمِلْتُ أَشْيَاءَ لا أَرَاهَا هَا هُنَا. فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُه

‘‘নিশ্চয় আমি সেই জান্নাতী ব্যক্তি সম্পর্কে জানি, যে সবার শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সবার শেষে জাহান্নাম থেকে বের হবে সে এমন এক ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন হাজির করা হবে এবং বলা হবে, ‘ওর ছোট-ছোট পাপগুলো ওর কাছে পেশ কর এবং বড়-বড় পাপগুলো তুলে নাওতারপর তার ছোট-ছোট পাপগুলো তার কাছে পেশ করা হবে এবং বলা হবে, ‘তুমি অমুক দিনে এই পাপ করেছ, অমুক দিনে এই এই পাপ করেছ? সে বলবে, হ্যাঁ সে তো অস্বীকার করতে পারবে না সে তার বড় পাপগুলো পেশ করার ভয়ে ভীত থাকবে অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘তোমার প্রত্যেক পাপের স্থলে একটি করে পুণ্য দেয়া হলতখন সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তো অনেক কিছু (এমন পাপ) করেছি, যা এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি না ঘটনা বর্ণনা করে নাবী (সা.) এমনভাবে হেসে ফেললেন যাতে তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে গেল’’[9]

উপরিউক্ত বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেলো আল্লাহ তাআলা বিশেষ প্রেক্ষাপটে কিছু কাবীরা গুনাহ বান্দার অজান্তে তাওবাহ্ ছাড়াও মাফ করেন

কাবীরা গুনাহ ক্ষমা সম্পর্কে ক্বাযীইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)[10] বলেন :

أن الكبائر إنما تكفرها التوبة أو رحمة الله تعالى وفضله والله أعلم

‘‘কাবীরা গুনাহ শুধু তাওবাহ্ অথবা আল্লাহর রহমত অনুগ্রহের মাধ্যমে মাফ হয় আল্লাহ অধিক জানেন’’[11]

অধিকাংশ (জুমহূর) ‘আলিমগণের মতে, আল্লাহ তাঁর রাসূলের আনুগত্যমূলক বিভিন্নআমল এবং ফরযআমলগুলো সগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করিয়ে দেয়; কাবীরা গুনাহ মাফ করায় না যা উপরিউক্ত আলোচনার প্রথমদিকের দলীলগুলোতে বর্ণিত হয়েছে কাবীরা গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাওবাহ্ করতে হবে তবে হদ্দ বা দন্ড-বিধির আলোকে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত শাস্তির রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট কাবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায় যে কথা আমরা সামনে আলোচনা করবো

সাউদী আরবের বিখ্যাতআলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)[12] ব্যাপারেআলিমগণের মতভেদ উল্লেখ করার শেষে বলেন,

‘‘কিন্তু বলা যেতে পারে যে, আমরা এরূপ কথা বলা (মতভেদ করা) থেকে নীরব থেকে আল্লাহর নিকট এই আশা রাখব যে, তিনি (সগীরা-কাবীরা) সকল গুনাহকেই ক্ষমা করে দেবেন বিশেষ করে যখন হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘তার পাপ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে’’[13] আর আল্লাহর কাছে এই আশা রাখব যে, কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত না থাকলেও সে ক্ষমা বহাল থাকবে বলাবাহুল্য, কথা বিচ্যুতি থেকে অধিক দূরে এবং আশার ব্যাপারে বেশি বলিষ্ঠ’’[14]

আল্লাহ গাফুর (ক্ষমাশীল), রহীম (দয়ালু); তিনি চাইলে যে কোন ওয়াসীলায় আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন অতএব, আমরা সর্বদা গুনাহ মাফের ব্যাপারে আশাবাদী থাকবো, কখনো হতাশ বা নিরাশ হবো না তাই হতাশ না হয়ে আশাবাদী থাকাটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর

 

© Arefin Masuk. All rights reserved. Premium By FC Themes