﴿وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَةَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ١٨﴾ [النحل: ١٨]
“আর যদি তোমরা আল্লাহর নি‘আমত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ১৮]
আল্লাহর নি‘আমতের উসূল তথা মূলনীতি ও ফুরু‘ তথা শাখা-প্রশাখা সম্পর্কিত সূরা নাহাল তিলাওয়াত করুন। এতে আল্লাহর নি‘আমতের অপরিসীম দান ও প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই তিনি সূরার শেষে বলেছেন,
﴿كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تُسۡلِمُونَ٨١﴾ [النحل: ٨١]
“এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তার নি‘আমতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮১]
অত:পর সূরা আর-রহমান আদ্যোপান্ত গভীর চিন্তা-গবেষণাসহ তিলাওয়াত করুন। এ সূরাতে তাঁর নি‘আমতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এতে রয়েছে রহমানের রহমতের যাবতীয় উদাহরণ ও নানা ধরণের নি‘আমতের বিস্তারিত বিবরণ। এ কারণেই তিনি তাঁর অনুগত মুমিনদের জন্য জান্নাতে পূর্ণ ও চিরস্থায়ী নি‘আমতের কথা স্মরণ করে দিয়ে সূরাটি শেষ করেন। আর জান্নাতের এ চিরস্থায়ী নি‘আমত আল্লাহর নি‘আমতের অন্যতম প্রভাব। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে রহমত বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱبۡيَضَّتۡ وُجُوهُهُمۡ فَفِي رَحۡمَةِ ٱللَّهِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ١٠٧﴾ [ال عمران: ١٠٧]
“আর যাদের চেহারা সাদা হবে, তারা তো আল্লাহর রহমতে থাকবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৭]
হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন,
«أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي».
“তুমি আমার রহমত, তোমার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা রহমত করব।”[4] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَهُوَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ٦٤﴾ [يوسف: ٦٣]
“এবং তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৬৩]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَلَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ الوالدة بِوَلَدِهَا».
“মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।”[5]
«إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ كِتَابًا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ الخَلْقَ: إِنَّ رَحْمَتِي سَبَقَتْ غَضَبِي».
“আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লেখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো “আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত অগ্রগামী রয়েছে।”[6]
এককথায়, আল্লাহ তাঁর রহমতে সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অপরিসীম দয়ায় তিনি তাদের কাছে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁর রহমতের কারণেই তিনি তাদেরকে আদেশ-নিষেধ করেছেন এবং তাদের জন্য শরী‘আত বিধিবদ্ধ করেছেন। তিনি তাদের প্রতি তাঁর বাহ্যিক ও গোপনীয় নি‘আমতে পরিপূর্ণ করেছেন এবং তাদেরকে সুন্দর সূক্ষ্ম পরিচালনায় পরিচালিত করছেন। তাঁর রহমতেই তিনি তাদেরকে বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন করেন। তাঁর রহমত দুনিয়া ও আখিরাতে ভরপুর। অত:এব, তাঁর রহমত ব্যতীত কোন কিছুই শুভ-সুন্দর হয় না; কোন কাজই তাঁর রহমত ব্যতীত সহজ হয় না; কোন উদ্দেশ্য তাঁর রহমত ব্যতীত অর্জিত হয় না। তাঁর রহমত সব কিছু ঊর্ধ্বে, সবচেয়ে মহান ও সুউচ্চ। মুহসিন মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে তাঁর রহমতের পূর্ণ অংশ এবং অপরিসীম কল্যাণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٞ مِّنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ٥٦﴾ [الاعراف: ٥٥]
“নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।” [সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত: ৫৫][7]
[1] এ নামদ্বয়ের দলিল হলো নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী,
﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ٣﴾ [الفاتحة: ٣]
“দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৩]
[2] আল-খুলাসা দিমনাল মাজমূ‘আতিল কামিলা লি মুয়াল্লাফাতিস সা‘দী, ১/১৭৯; আত-তাফসীর, ১/৩৩।
[3] আল-হাক্বকুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ১০৬-১০৭।
[4] সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, বাব, কাওলুহু ‘ওয়াতাকূলু হাল মিম মাযীদ’ ৬/৪৮, হাদীস নং ৪৮৫০; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জান্নাহ, বাব, আন-নারু ইয়াদখুলুহাল জাব্বারূন ওয়াল জান্নাতু ইয়াদখুলুহাদ দু‘আফা, ৪/২১৮৬, হাদীস নং ২৮৪৬, এটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসের অংশ বিশেষ।
[5] সহীহ বুখারী, ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব, বাব, রহমাতুল ওয়ালাদি ওয়াতাকবীলিহি ওয়া মু‘আনাকাতিহি, হাদীস নং ৫৯৯৯; সহীহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা, বাব, ফি সি‘আতি রহমাতিল্লাহি তা‘আলা, হাদীস নং ২৭৫৪। হাদীসটি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
[6] সহীহ বুখারী, ৮/১৭৬, কিতাবুত তাওহীদ, বাব, ওয়াকানা ‘আরশুহু ‘আলাল মাই, হাদীস নং ৭৫৫৪; সহীহ মুসলিম, ৪/২১০৭, কিতাবুত তাওবা, বাব, ফি সি‘আতি রহমাতিল্লাহি তা‘আলা, হাদীস নং ২৭৫১।
[7] আল-মাওয়াহিবুর রাব্বানিয়্যাহ মিনাল আয়াতিল কুরআনিয়্যাহ, পৃ. ৬৪।